শীতের কথা মনে পড়লেই অনুভূত হয় বাতাসের হিমশীতলতা, ঘ্রানেন্দ্রিয় পায় পিঠাপুলির ঘ্রাণ। মনে পড়ে লেপ-কম্বল মুরি দিয়ে গুটিসুটি করে ঘুমানো। শীত ঋতু অন্য ঋতুর চেয়ে একটু ভিন্নরূপে আসে। এর কিছু মন্দ দিকও রয়েছে। সেটা সরাসরি ত্বককে আক্রমণ করে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের ত্বকে আসে কিছু পরিবর্তন। এ পরিবর্তন আমাদের ত্বককে করে তোলে রুক্ষ এবং শুষ্ক। ত্বকে হয় ওঠে স্পর্শকাতর। দেখা দেয় এ্যালার্জি, র্যাশ, ব্রণ। অন্য ঋতুতে ব্যবহৃত প্রসাধনীও বদলে নিতে হয়।
আসুন জেনে নেই শীতে ত্বকের সমস্যা এবং সমাধান
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শীতকালে ধূলাবালি অনেক বেড়ে যায়। দেখা দেয় চর্মরোগ। যেমন জেরিয়াট্রিক ডার্মাটোসিস, স্ক্যার্বিস, ইমটেটিগো ইত্যাদি। এসব রোগের কারণে ত্বকে লালচে দাগ, রোদে পোড়া ভাব, ভাঁজ পড়া ইত্যাদি দেখা দেয়। ঢাকা মেডিকেলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বখতিয়ার কামাল এসব সমস্যা সমাধানে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
☑প্রচুর পানি পান করা।☑শাক-সবজি ও সুষম খাবার খাওয়া।
☑অতিরিক্ত সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার না করা।
☑হালকা গরম পানিতে গোসল করা।
শীতের উপযুক্ত প্রসাধনী
শীতের প্রসাধনী অন্য ঋতুতে ব্যবহৃত প্রসাধনীর চেয়ে একটু আলাদা। রুক্ষ ত্বককে সুস্থ করতে নিতে হয় বাড়তি যত্ন। এসময় বেখায়ালি হলে হারিয়ে যেতে পারে ত্বকের সৌন্দর্য।
ময়েশ্চারাইজার (Moisturizer)

মেকআপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল এসময় ত্বককে হেলদি করার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, শীতে ত্বকে ময়েশ্চারাইজ রাখতে হবে। এজন্য ব্যবহার করতে হবে ময়েশ্চারাইজার, লোশন, অলিভ অয়েল, গ্লিসারিন, বডি লোশন, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি।
আমন্ড অয়েল (almond oil)

শীতের রাতে অনেকেই নাইট ক্রীম ব্যবহার করে থাকে। তবে আমন্ড অয়েল খুবই উপকারী। আমন্ড অয়েল ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বয়সের ভাঁজ কমায় এবং ব্রণের দাগ দূর করে।
সানস্ক্রীন ক্রীম (Best Sunscreen Cream for Oily Skin)

শীতের সময় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া রোদ থাকে। তাই এসময় বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রীন লাগাবেন। অন্ততপক্ষে ৫০+ এসপিএফ রয়েছে এমন সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পর নতুন সানস্ক্রীন লাগান। কারণ সানস্ক্রীনের কার্যকারিতা থাকে ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যেভাবে যত্ন নিতে পারেন তেমন কিছু পদ্ধতিঃ
প্রাকৃতিক উপায়ে শীতকালীন ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এক টেবিল চামচ মসুরের ডাল বাটা ও এক টেবিল চামচ কাঁচা দুধ বা সর ব্যতীত দুধের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ ফলের রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। বেছে নিতে পারেন সাইট্রিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ফল (টক ফল), যেমন—কাগজিলেবু, বাতাবিলেবু, কমলালেবু ইত্যাদি।
আবার ব্যবহার করতে পারেন পাকা পেঁপে, যা মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। তৈলাক্ত ত্বকে শশার রস চমৎকার কাজে দিবে। শশার রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে প্রয়োগ করুন। এতে তেলতেলে ভাব কমবে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য একটু ভিন্ন ফর্মুলা। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে মধু নিন এক টেবিল চামচ। আর ফলের রস নিতে হবে আধা টেবিল চামচ। সঙ্গে যোগ করুন একটু দুধের সর আর চারটি আমন্ড বাদাম বাটা। প্যাকটি তুলে ফেলার পর কোল্ড ক্রিম বা বেশি ময়েশ্চারযুক্ত কোনো ক্রিম লাগাবেন। কলা পেস্ট করে লাগালে শুষ্ক ত্বকে প্রাণবন্ত ভাব ফিরে আসবে। মধুও শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। টমেটোর রসের সঙ্গে একটু মধু পেস্ট করে নিন। অনেক ভালো ফল পাবেন।
স্বাভাবিক ত্বকের জন্যও এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে লেবুর রস বাদ দিতে হবে আর মধুর পরিমাণ হবে এক টেবিল চামচ। স্বাভাবিক ত্বকে নারকেল তেল খুবই কার্যকরি। সুতির রুমাল গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো মতো নিংড়ে নিন। মুখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। মুখটা মুছে নিয়ে এবার গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। যেকোন ত্বকেই এটি ব্যবহার করতে পারেন।
রূপচর্চা বিষয়ে আরও বলেছেন রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন। তার মতে, ‘শীতকালে বেশিরভাগ সমস্যা দেখা দেয় ধূলাবালির কারণে। তাই এসময় ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। মুখ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গেরও যত্ন নিতে হবে।
চুলের যত্ন খুবই জরুরি

শীতের সময় বাতাসে ধূলাবালি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চুল হয়ে যায় বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক। অনেকের চুল উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। একটু যত্ন নিলেই চুল থাকবে ঝরঝরে স্বাস্থোজ্জ্বল। যেনে নিন টিপস-
অলিভ অয়েল আর মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু লাগাতে পারেন।
হাত-পায়ের যত্নে নো কম্প্রোমাইজ

শীতের আবহাওয়া শুষ্ক এবং বাতাস ধূলোবালিতে পরিপূর্ণ হবার কারণে হাত-পা রুক্ষ হবেই। তাই বাসায়ই পেডিকিওর-মেনিকিওর করে নিতে পারেন। যেনে নিন কী করতে হবে।
মোটামুটি বড় পাত্রে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে সামান্য অলিভ অয়েল এবং দুই চামচ পরিমাণ লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। পানির সঙ্গে শ্যাম্পু মিশিয়ে আবার ১০ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন তারপর ব্রাশ অথবা পিউবিক স্টোন দিয়ে নখের চারপাশ, পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করে নিন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত-পা ধুয়ে। এবার বডি লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যদি পা ফাঁটার লক্ষণ দেখা দেয় তবে নিয়মিত গোড়ালিতে ভেসলিন বা অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন।
এভাবেই খুব সহজে শীতের শুষ্কতা এবং রুক্ষতা থেকে ত্বককে বাঁচাতে পারেন। থাকুন ফুরফুরা।
রূপচর্চার যাবতীয় জিনিসপত্র কিনতে ভিজিট করুন Jadroo। এখানে পাবেন বিদেশ থেকে আমদানি করা আসল প্রসাধনী সামগ্রী। কষ্ট করে ডিসিসি মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা শপিং মল, আনারকলি মার্কেট এবং পলওয়েল মার্কেটে না গিয়ে ঘরে বসে অর্ডার করুন আপনার প্রয়োজনীয় কসমেটিক্স পণ্য। পৌঁছে যাবে প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে।